নাগরিক এক্সপ্রেস অনলাইন:
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতে সম্প্রতি নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। গত ১৭ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই সংলাপ গত রোববার জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ১৫ দিনব্যাপী চলা এই সংলাপের বিভিন্ন দিক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় অংশ নেয়া, না নেয়া নানা দিক নিয়ে সংবাদ সারাবেলার সাথে কথা বলেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রূপরেখা যাই হোক না কেন, দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নির্বাচনে যে কোন মূল্যে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ আয়োজনের প্রথম এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজমান সমস্যা সমাধান সম্ভব। এতে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই আলোচনায় অংশ নিয়েছে। বিএনপিসহ যে ৯টি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়নি; তাদের তাদের দাবির ব্যাপারগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ইসির আনুষ্ঠানিক এই সংলাপ শেষ হলেও আস্থাহীনতায় থাকা দলগুলোকে নিয়ে সংকট সমাধানে ব্যাপারে আলোচনায় বসে নিজেদের মধ্যে ঐকমত্যে আসার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে। জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মতভেদ দূর করতে অন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বড় দুই রাজনৈতিক দলের নেতারা আলোচনার মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এধরনের উদ্যোগ অল্পতেই শেষ না করে সফলতা না আসা পর্যন্ত চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
ইসি সংলাপ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফহুইপ জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, ‘এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাদের আস্থা নেই বলেই আমরা সংলাপ প্রত্যাখ্যান করেছি। আর বিএনপিকে কোন রাজনৈতিক সংলাপ অর্থবহ হতে পারে না। কারণ আমার দল মনে করে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনও এই সরকারের আজ্ঞাবহ একটি কমিশন। সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়নই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। এই সংলাপ সরকারের কলাকৌশল বাস্তবায়নের একটি অংশ মাত্র। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাড়া এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি কোন নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি মনে করি ইসির এবারের সংলাপে নির্দিষ্ট কোন এজেন্ডা না থাকায় নতুন কিছু নয় বরং পুরনো কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া ছাড়া নতুন কোন প্রাপ্তি যোগ হয়নি। ৯টি রাজনৈতিক দলকে ইসি এখনো আস্থায় আনতে পারেনি। ইভিএমের ব্যাপারে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নেতিবাচক মতামত দিয়েছে, যা ইসির আমলে নেয়া উচিত। আমিও মনে করি ইভিএমে নির্বাচনে ভোট গ্রহণ পদ্ধতি সাধারণ মানুষকে এখনো আস্থায় আনতে পারেনি। এছাড়া বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যেহেতু আস্থাহীনতা কাটেনি তাই আলোচনায় উঠে আসা সেসব বার্তা ইসিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতে হবে। দলগুলো যাতে সেসব সংকট দূর করে ঐকমত্যে আসে সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে তাগিদ অব্যাহত রাখতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপ শুভ উদ্যোগ। তবে ইসির এই আলোচনা তখনই সার্থক হবে যখন নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যারা সংলাপে অংশ নেয়নি সেটা তাদের রাজনৈতিক কৌশল। এ ব্যাপারে ইসি ভবিষ্যতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে তবে তাদের দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার কোন সুযোগ নেই। ওই দলগুলোর নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি ইসির পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়, কারণ বিষয়টি সাংবিধানিক। তবে রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে এ বিষয়ে আলোচনায় বসে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে।’ আর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণকে ইতিবাচক মনে করছেন তিনি। বলেন, নির্বাচন কমিশন চাইলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এক তৃতীয়াংশ ভোট ইভিএম পদ্ধতিতে গ্রহণ করা সম্ভব হবে। তবে এ ব্যাপারে নির্বাচনের আগের ব্যাপক প্রচারণা ও মগ ভোটিংয়ের প্রয়োজন হবে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে পক্ষকালব্যাপী ইসির আহবানে সাড়া দিয়ে সংলাপে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে নিজের মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরে। তবে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, বাসদ, মুসলিম লীগ (বিএমল), কল্যাণ পার্টি, জেএসডি, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি ও বিজেপিসহ ৯টি দল ইসির এ সংলাপ বর্জন করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও জাতীয় পার্টি (জেপি) সংলাপের জন্য পরবর্তী পর্যায়ে সময় চেয়েছে। ইসির তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ৩শ’রও বেশি প্রস্তাব পেয়েছে কমিশন। এসব প্রস্তাবে ইভিএম, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার, ভোটারদের আস্থা অর্জনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ২০টি রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে ১৮টি রাজনৈতিক দল
Leave a Reply